খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে স্থগিত হয়ে যাওয়া তিন ভোটকেন্দ্র এবং অস্বাভাবিক হারে ভোট পড়া আরো তিন কেন্দ্রসহ মোট ছয়টি কেন্দ্রে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তদন্ত কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ইসির যুগ্ম সচিব খোন্দকার মিজানুর রহমান এ কথা বলেন। বিকেলে নির্বাচন কমিশনে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করবে তদন্ত কমিটি। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপসচিব ফরহাদ হোসেন ও সিনিয়র সহকারী সচিব শাহ আলম। খোন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, স্থগিত হয়ে যাওয়া তিন কেন্দ্রে যে জাল ভোট বা অনিয়ম হয়েছে, এটা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমরা ওই তিন কেন্দ্রে তদন্তে গিয়ে দেখেছি, সেখানে সরকারি দলের লোকজন জাল ভোট দিয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর পর্যন্ত করেছে। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজন বিভিন্নভাবে ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, এ ছাড়া অস্বাভাবিক হারে ভোট পড়া তিন কেন্দ্রের বিষয়েও আমরা তদন্ত করে এবং ওই কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে স্থানীয় ক্ষমতাবানদের ভয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কেউ অনিয়মের বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। কারণ তাঁরা ওখানেই বসবাস করেন এবং ওখানেই তাঁদের থাকতে হবে। তবে আমাদের কাছে কিছু তথ্য ছিল ওই তিন কেন্দ্রের বিষয়ে। বিভিন্নভাবে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে মনে হয়েছে, সেখানেও অনিয়ম হয়েছে। ইসির যুগ্ম সচিব আরো বলেন, কমিশন আমাদের ওই সকল কেন্দ্রে সঠিক কী ঘটেছে, তার চিত্র তুলে ধরতে বলেছে। আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এরপরে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কমিশন সবকিছু যাচাই-বাছাই শেষে মামলা করতে পারে বলেও যোগ করেন তিনি। খোন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, এ ছাড়া আরো অনেক কেন্দ্রেই হয়তো অনিয়ম হয়েছে। জাল ভোট পড়েছে। তবে সবাই তো আর সমান নয়। কোনো কোনো নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এসবে বাধা দিয়েছেন, কেউ হয়তো বাধা দেননি। গত ১৫ মে অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচন চলাকালে সাধারণ ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (একাডেমিক ভবন-২), ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের লবণচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। গত বুধবার ওই স্থগিত হয়ে যাওয়া কেন্দ্রগুলোতে পুনরায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া গত ১৫ মের নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, অন্তত ৫৪টি কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। তার ভেতরে তিনটি ভোটকেন্দ্রে মোট ৯৬.৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। খুলনা সিটির খালিশপুরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াবাটি হাজি শরীয়তউল্লাহ বিদ্যাপীঠ কেন্দ্রে মোট ভোটার এক হাজার ৮১৭ জন। ভোট গণনা হয়েছে এক হাজার ৮১৬ জনের। অর্থাৎ মোট ভোট গণনার হার ৯৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। খালিশপুরেরই ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মাওলানা ভাসানী বিদ্যাপীঠ কেন্দ্রে (স্কুল ভবনের দ্বিতীয় তলা) মোট ভোটার এক হাজার ৫০৩ জন ছিল। ভোট গণনা হয়েছে এক হাজার ৪৬৭ জনের। অর্থাৎ মোট ভোটের হার ৯৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া নতুন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মোট ভোট এক হাজার ৫০৮ জন ছিল। ভোট গণনা হয়েছে এক হাজার ৩৭৮ জনের। অর্থাৎ মোট ভোটের হার ৯১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটের গড় হার ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ।
Leave a Reply